বেঙ্গল নেক্সট্: ‘কিছুই কোথাও যদি নেই
তবু তো কজন আছি বাকি
আয় আরও হাতে হাত রাখি
আয় আরও বেঁধে বেঁধে থাকি’-
থেমে গেল শঙ্খনাদ! করোনার দ্বিতীয় ঢেউ কেড়ে নিল ‘বাবরের প্রার্থনা’র রচয়িতাকে। তাঁর মৃত্যুতে শেষ হয়ে গেল রবীন্দ্র-উত্তর যুগের একটা বিরাট অধ্যায়ের। পতন হল এক মহা-কাব্যিক-তারকার।
কল্লোল যুগের কবি শক্তি, সুনীল চলে গিয়েছিলেন আগেই। চলে গিয়েছেন বিনয়, উৎপলের মতো ক্ষুরধার লেখনীর কবিও। বাকি ছিলেন ‘গান্ধর্ব কবিতাগুচ্ছে’র স্রষ্টা। মারণ করোনা ভাইরাসের করাল ছোবল কেড়ে নিল তাঁর জীবন।
বয়স হয়েছিল ৮৯। তাও আরও কিছুদিন বাঁচতে পারতেন কবি। অন্তত আশা তো করাই যায়! কিন্তু শরীর সায় দিচ্ছিল না। চলতি বছরের জানুয়ারিতে একবার অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। সেবার সেরে উঠেছিলেন। তবে এবার আর পারলেন না।
১৯৩২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের চাঁদপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন শঙ্খ। পরে বাবা-মায়ের সঙ্গে কবি চলে আসেন ভারতে। তার পর থেকে এ দেশের জল-হাওয়া-মাটিতে বেড়ে ওঠা এই ভিন্ন ঘরানার কবির।
স্কুলের পাঠ শেষ করে শঙ্খ ভর্তি হন প্রেসিডেন্সি কলেজে। বাংলা সাহিত্যে অনার্স পাশ করে শঙ্খ ভর্তি হন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। মাস্টার্স শেষ কবে যোগ দেন অধ্যাপনায়। প্রথমে বঙ্গবাসী কলেজ, পরে সেখান থেকে চলে আসেন সিটি কলেজে। যাদবপুর এবং দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষকতা করেন তিনি। পড়িয়েছেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়েও। পড়াশোনার পাশাপাশি চালিয়ে গিয়েছেন লেখালেখিও।
তারই ফসল তাঁর বিখ্যাত কাব্য গ্রন্থ বাবরের প্রার্থনা। কখনও স্বনামে, কখনও কুন্তক ছন্দনামে চালিয়ে গিয়েছেন লেখালেখি। অবসর গ্রহণের পর কাব্যচর্চাই হয়ে ওঠে তাঁর ধ্যান জ্ঞান।
সাহিত্য চর্চার স্বীকৃতি হিসেবে শঙ্খ পেয়েছেন একাধিক পুরস্কার। পেয়েছেন রবীন্দ্র পুরস্কার, জ্ঞানপীঠ পুরস্কার, সাহিত্য অ্যাকাডেমি এবং পদ্মভূষণ।
তাঁর কবিতা জন্ম দিয়েছে অনেক বিতর্কের। না জেনেই তাঁকে আক্রমণ করেছেন অনেকেই। সেসব অবশ্য গায়ে মাখেননি কবি। কারণ তাঁর গায়ে যে ‘মাটি’র গন্ধ!
মৃত্যু সত্য। তবে কিছু মানুষের যেন মৃত্যু না হলেই ভালো হয়! তবে সবাইকেই যেতে হয় প্রকৃতির নিয়মে। শঙ্খও গিয়েছেন। রেখে গিয়েছেন তাঁর অমর লেখনী। রেখে গিয়েছেন বাবরের প্রার্থনা…